গোড়ার কথা

“মুগলি” শোর জন্য সমরদা তখন ডিস্ট্রিক্ট কাব মাস্টার আমাদের কয়েক জনকে ডেকে নিয়ে এলেন। রিহার্সাল হচ্ছে আলোকদার বাড়ি ডোভার লেনে, পিছনের মাঠে। শো হলো ইন্ডিয়ান মিউসিয়ামের ভিতরের মাঠে। স্টেজের পিছনে একটা বড় গাছ ছিল। ওই গাছ নিয়েই স্টেজ তৈরী হয়েছিল। মুগলি ঐ সত্যি গাছটা নিয়েই তৈরী। তাই মুগলির বাঁদররা ওই গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে নেমে আসত। উপরে বাঁদরদের নামানোর ভার আমার। ও রকম শো বোধ হয় পরে আর হয়নি।

পরদিন বড় বড় সব সংবাদ পত্রে ছবি সমেত খবর বেরলো । আমাদের খুব ভালো লাগলো। এর কিছুদিন পরে CLT বিপিন পাল রোডে ট্রেনিং সেন্টারের জন্য একতলা ভাড়া নিল। তখন কলেজ, আমার পড়া সব মিলিয়ে CLT যাওয়া হয়ে উঠছিলো না। সেই সময় সমরদাকে দাদার (কপিল মোহন সেন ) কথা বলেছিলাম। দাদার কোয়ালিফিকেশন (M. Sc., BA, BL ) শুনে সমরদা দাদাকে বিপিন পাল রোডে নিয়ে আস্তে বললেন। দাদার সঙ্গে কি সব আলোচনা করলেন, তারপর থেকে প্রতি রবিবার সকালে দাদা CLT তে যেতে শুরু করলেন। দাদা গভর্নিং বডির মেম্বার হয়ে গেলেন। আমি কিন্তু তখন ক্রাফটের ট্রেনিংএর জন্য রবিবার সকালে যেতাম। এর মধ্যে অনেক দিন CLT যাওয়া হয়নি কারণ আমার পড়া, কলেজ আর আমার অন্য একটিভিটি। রাত্রে Vidyasagar College , কাজ , পলিটিক্স — সব মিলিয়ে যাবো কখন। অনেক দিন পর রবিবার সকালে তিলক রোডের বাড়িতে যেতে আরম্ভ করলাম। তখন, এর মধ্যে A. D. D. M. (Academy of Dance, Drama & Music, Jorasakho) থেকে স্টেজ ক্র্যাফট নিয়ে পাশ করে গেছি। রবীন্দ্র ভারতী উনিভার্সিটিতে পার্ট টাইম চাকরি করছি। অনেক দিন চুপচাপ বসে ছিলাম। পলিটিক্স ভালো লাগতো না। বিকেলটা CLT তেই কাটাতে আরম্ভ করলাম, অন্য সব ভুলে থাকার জন্য।

এর পর একদিন ভিসি (প্রথম) হিরণ্ময় বন্দোপাধ্যায় ডেকে পাঠালেন। সামনে বসিয়ে বললেন, ফুল টাইম কাজ করবার ইচ্ছে আছে ? একটা সাদা কাগজ বার করে আমার হাতে দিলেন। টেবিলের পেনটা এগিয়ে দিয়ে বললেন একটা এপ্লিকেশন ভিসি র নামে লেখ। চিঠিটা কিছু কাটা কুটি করে আমার দিকে চেয়ে বললেন, কবে ইন্টারভিউ জেনে নিতে। চাকরি ‘থিয়েট্রিক্যাল কেয়ার টেকার’, পার্ট-টাইম। রবীন্দ্র ভারতী উনিভার্সিটির প্রথম রেজিস্ট্রার ভবরঞ্জন দে , বেশ কিছুদিন সপ্তাহে তিন দিন করে জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে উপস্থিত হয়ে সই করতে যেতাম। টাকা যা পেতাম তা সিগারেট আর গাড়ি ভাড়াতেই চলে যেত। যেতাম তার কারণ ওখান থেকে অনেক কাজ পেতাম। পরে ফুল টাইমার হয়ে যাই।

এই সময় এক দিন সমরদা ফেস্টিভ্যালের লাইট এর সব ভার আমায় দিলেন।তাপসদার তখন এতো কাজ যে ফেস্টিভ্যালে একদিনও আসতেই পারতেন না। হয়তো ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে একটু উপস্থিত হয়েই চলে যেতেন। বাৎসরিক CLTর যে প্রোগ্র্যাম হতো সেই সময় সমরদা আমাদের পত্রিকায় লিখতেন, আলোক সম্পাতে — তাপস সেন, সহকারী — কনিষ্ক সেন । একদিন তাপসদা রেগে গিয়ে বললেন, এর পর থেকে কণিষ্কই করবে, আমি নেই। আমি দরজার বাইরেই ছিলাম, শুনলাম , “CLT র জন্য তাপস, না তাপসের জন্য CLT ।”
পরের বছর কেউ আমাকে লাইটের মাল দিলো না। কাছেই রঞ্জু বলে একজন ছিলেন তিনি সাউথ ইন্ডিয়ানদের লাইট করতেন। দুটো স্পট (১০০০w ) আর কিছু ফ্লাড লাইট ছিলো , আর ছিল বিশাল বড় ভালো রেসিসটেন্স ডিমার । রন্জু বাবুকে বলতেই খুশি হয়ে বললেন, নিয়ে যাও, কিন্তু কেটে গেলে দাম দিতে হবে। CLT র নিজের ২০ টা মতো ফ্লাড লাইট ছিল। আমাকে এসিস্ট করবার মত এক কমল ছাড়া কেউ ছিল না। কমল একজনকে নিয়ে এল। এ ছাড়া জেনারেল ইলেকট্রিক যে করছিলো তাদের কয়েক জনকে নিয়ে সারা স্টেজে লাগলাম ওই ফ্লাড লাইট গুলো। ওদের দিয়েই একটা ডিমার কন্ট্রোল বোর্ড বানালাম। দুটো স্পটের ডিমার্ তো হলো কিন্তু ফ্লাড লাইট গুলোর ডিমার কি হবে ? মাঠে প্যান্ডেল করে স্টেজ হয়েছে। মাঠেই স্টেজের পাশে ভাঙা বড় বড় আন্ডার গ্রাউন্ড চিনা মাটির পাইপ পড়েছিল। সেগুলো উইংসের নিচে সিমেন্ট দিয়ে জমিয়ে দিলাম। তিনটে ওয়াটার ডিমার তৈরী হয়ে গেল। জল ভোরে একটু নূন দিলাম , দড়ি দিয়ে পুরানো পাঁচ সের বাটখারা ঝুলিয়ে দিয়ে ওয়াটার ডিমার করলাম। শোর পরে সব শুনে সমরদা একটু বকলেন। এর পরের বছর ফেস্টিভ্যাল এর আগে ডিমার্ ও স্পট কেনার ব্যবস্থা করে দিলেন। আজ ও সেই স্পট লাইট ও ডিমার CLT তে আছে।

 

 

 

 

 

— কনিষ্ক সেন (০১.০৮.২০২০)